বাংলাদেশে গত ৫ দিনে অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ আগুনের ঘটনাটি ঘটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমানবন্দরটির কার্গো সেকশনে মূলত আগুন লেগেছে। যা এখনো নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস, সেনা ও বিমানবাহিনী। এতে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। একের পর এক এসব আগুনের ঘটনা নিছকই দুর্ঘটনা নাকি কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এসব অগ্নিকাণ্ডের পেছনে নির্বাচন পেছানো বা বানচালের ষড়যন্ত্রও দেখছেন।
বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড
শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ২ টার কিছুসময় পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। এরপর একে একে ফায়ার সার্ভিসের মোট ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ যোগ দেয়। পাশাপাশি আগুন নেভাতে যোগ দেয় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী। মোতায়েন করা হয় দুই প্লাটুন বিজিবিও। আগুনের কারণে বিমানবন্দরটিতে ফ্লাইট ওঠা-নামা স্থগিত হয়ে যায়। এই সময়ে বেশকিছু ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করতে না পেরে সিলেট-চট্টগ্রাম ও কলকাতায় অবতরণ করে। প্রায় ৭ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর রাত ৯টা থেকে বিমানবন্দরটিতে পুনরায় ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়।
শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুনটি লাগে মূলত যেখানে আমদানি করা পণ্য রাখা হয় সেখানে। সেখানকার প্রায় সব পণ্য পুড়ে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। এতে বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ইতোমধ্যে একটি কমিটি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
রাতে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলছেন, বাতাসের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে। এছাড়া ভেতরে খোপ খোপ করা ঘর ছিল। সেজন্য আগুন নেভাতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে বর্তমানে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন শুধু নির্বাপণ কাজ চলছে। আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ চলবে।
এদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগা অগ্নিকাণ্ডের খবর রয়টার্স, এএফপি, নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
চট্টগ্রামে কারখানায় আগুন
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগুন লাগার ঠিক দুদিন আগে, গত ১৬ অক্টোবর দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) এলাকার একটি কারখানায় আগুন লাগে। সন্ধ্যার দিকে পুরো ভবনটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। দাউদাউ করে জ্বলা আগুনে আশপাশের কয়েকশ মিটার পর্যন্ত আগুনের তাপ অনুভূত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিজিবি যোগ দেয়। কিন্তু আগুনের তীব্রতায় তারা একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েন। রাত ১০টার দিকে হালকা বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু তাতেও আগুন নেভেনি। আগুনে জ্বলতে জ্বলতে ভবনটির কোনো কোনো অংশ ধসে পড়ে। বর্তমানে অনেকটাই কঙ্কালসার হয়ে পড়েছে ভবনটি। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বড় অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত ভবনটিতে অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল কোম্পানি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান আছে। ভবনটির আটতলা খালি। সাততলায় অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল কোম্পানির গুদাম। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।
মিরপুরের শিয়ালবাড়ি অগ্নিকাণ্ড
গত ১৪ অক্টোবর সকালে মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় পোশাক কারখানা ও রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে প্রাণ হারান ১৬ জন। দগ্ধ হন আরও অনেকে। শিয়ালবাড়িতে চারতলা ভবনে থাকা ‘আনোয়ার ফ্যাশন’ পোশাক কারখানা ও পাশে থাকা টিনশেড ঘরে রাসায়নিকের গুদামে এ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন লাগার ৪ দিন পরও ঘটনাস্থল থেকে ধোঁয়ার মতো এক ধরনের বিষাক্ত গ্যাস বের হয়। যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে থাকার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়। একইসঙ্গে আগুনের কারণ তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।