জুলাইকে ‘মানি মেকিং মেশিনে’ পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, সমন্বয়ক পরিচয়টি নেতিবাচক কাজে ব্যবহার করাটা অভ্যুত্থানের পর পরই শুরু হয়েছিল। তাদের হয়তো স্বপ্ন ছিল চাঁদাবাজি করবে
রোববার রাতে ফেসবুকে লাইভে এসে তিনি এ কথা বলেন। দুই ঘণ্টা ২৪ মিনিটের দীর্ঘ ওই লাইভে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন উমামা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে উমামা ফাতেমা বলেন, জুলাই একটা অনেক বড় ধরনের অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু আমার মাথায়ই আসেনি যে, এটা দিয়ে টাকা-পয়সা ইনকাম করা যায়। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র হওয়ার পর প্রথম আবিষ্কার করেছি যে, এগুলো দিয়ে লোকজন নানা কিছু করছে। টেন্ডার-তদবির বাণিজ্য করছে, ডিসি নিয়োগ করছে। জুলাই আন্দোলনকে কেন মানি মেকিং মেশিন করবো? আনফরচুনেটলি সেটাই হয়েছে।
তিনি বলেন, সমন্বয়ক পরিচয়টি নেতিবাচক কাজে ব্যবহার করাটা অভ্যুত্থানের পর পরই শুরু হয়েছিল। ৫ আগস্টের পরদিন সকালবেলা থেকেই দেখি, সমন্বয়ক পরিচয়ে নাকি একেকজন একেক জায়গায় গিয়ে দখল করছে! আমি এক রকম অবাক হয়ে যাই যে, গতকাল পর্যন্ত তো সমন্বয়ক পরিচয়টা দিতেই চাইছিল না আর আজকে থেকে শুনছি সবাই সমন্বয়ক। এই পরিচয়ে চাঁদাবাজি-দখল চলছে৷…আমার মনে হচ্ছিল, এখন কি রক্ষীবাহিনীর মতো সমন্বয়কবাহিনী তৈরি হচ্ছে নাকি! আমার তখন মনে হয়েছিল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটার আর দরকারটা কী, এখন তো সবাইকে অ্যাকোমোডেট করা নিয়ে ভাবা উচিত৷ আমার চিন্তা ছিল এই প্ল্যাটফর্মটাকে আরও ব্রড ও ডিসেন্ট্রালাইজ করে ফেলা উচিত৷ আমি মনে করি না, এটি ভুল চিন্তা ছিল৷ এই প্ল্যাটফর্মটা ওই সময় থেকে যাওয়ার অনেকগুলো ডিমেরিটস আমরা এখনো ভোগ করছি৷ কিন্তু এ কথাটা ওই সময় বলে অনেক মানুষকে আমি শত্রু বানিয়ে ফেলেছি।
ফেসবুক লাইভে উমামা আরও বলেন, ন্যূনতম আত্মসম্মান আছে, এমন কেউ এই প্ল্যাটফর্মে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) টিকতে পারবে না৷ এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে থাকাটা আমার জীবনের একটা ট্র্যাজিক ঘটনা ছিল৷ যে মানুষগুলো জুলাইয়ের মধ্য দিয়ে হেঁটে গেছে, আন্দোলনের সম্মুখসারিতে ছিল, তারা যখন খুবই সস্তা কাজ করেন, সেটা আসলে নেওয়া যায় না। আমার মনে হয়, গত এক বছরে আমার অনেক সময় নষ্ট হয়েছে৷ আমি যদি একা কিছু কাজ করার চেষ্টা করতাম, আরও ভালো কিছু করতে পারতাম৷ আমাদের ওপর মানসিক চাপ গেছে, কারণ আমাদের তো দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন ছিল৷ আরেকজনের মধ্যে হয়তো স্বপ্ন না-ই থাকতে পারে৷ তাদের হয়তো স্বপ্ন ছিল চাঁদাবাজি করবে৷ আমাকে ডেকে এনে আপনি একটা টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করেছেন৷ আমি তো টিস্যু পেপার না।
উল্লেখ্য, উমামা জুলাই আন্দোলনের সময় ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ছিলেন। পরে ছাত্র ফেডারেশন থেকে পদত্যাগ করেন এবং গত বছরের অক্টোবরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্রের দায়িত্ব নেন। গত ২৭ জুন তিনি প্ল্যাটফর্মটি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানান।